
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালের মার্চে স্টার্টআপ খাতের জন্য দুটি তহবিল গঠন করেছিল, যার মধ্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে, যা খুবই সীমিত।
এই তহবিল দুটি গঠিত হয়েছিল:
- ৫০০ কোটি টাকার পুনঃ অর্থায়ন তহবিল – বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি।
- ৫২টি তফসিলি ব্যাংকের মুনাফার ১ শতাংশ অর্থে গঠিত স্টার্টআপ তহবিল – এই তহবিলটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৫০৫ কোটি ১০ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
তবে, ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত অর্থ বিতরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, ১৫৯টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা প্রকৃত অর্থায়নের তুলনায় অনেক কম। তহবিলের বাকি ৯৬৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এখনও অব্যবহৃত রয়েছে।
তহবিলগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার না হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনা এবং ঋণ বিতরণের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়তা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছু ব্যাংক যেমন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি, ডাচ্-বাংলা, ব্র্যাক ব্যাংক বড় অঙ্কের তহবিল গঠন করলেও, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ অর্থ স্টার্টআপদের মধ্যে বিতরণ করতে পারেনি। এমনকি, কিছু ব্যাংক এক টাকাও ঋণ বিতরণ করেনি।
এ অবস্থা স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্বেগজনক, যারা পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পেয়ে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
স্টার্টআপ খাতে অর্থায়ন নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশে, বিশেষ করে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ তহবিল গঠন করেছে, তার তুলনায় বিতরণ খুবই কম। বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে স্টার্টআপের ৯০% এর বেশি ব্যর্থ হওয়ার নজির থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্টার্টআপ খাতে অর্থায়ন নিয়ে আগ্রহ কম। এর ফলে অনেক স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান সঠিক পরিমাণ ঋণ পাচ্ছে না, যার ফলে তাদের কার্যক্রম বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
এখন পর্যন্ত ১৫৯টি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ঋণ পেলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যেমন, সোনালী ব্যাংক ৪৩টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে ৮৬ লাখ টাকা বিতরণ করেছে, যার মানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য গড়ে ২ লাখ টাকা। এই সীমিত পরিমাণ ঋণ এই খাতের জন্য খুবই ক্ষুদ্র, এবং বেশিরভাগ স্টার্টআপ ৫০ লাখ টাকার নিচে ঋণ পাচ্ছে।
ফাহিম মাশরুর, বিডিজবসের CEO, বলেন যে এই সামান্য অর্থ দিয়ে স্টার্টআপ খাতের উন্নতি সম্ভব নয় এবং তহবিলের আকার ও বিতরণের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। তবে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) MD সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, স্টার্টআপ খাতটি ব্যাংকগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ অধিকাংশ স্টার্টআপ ব্যর্থ হয়ে যায় এবং এ কারণে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম।
এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানানো হয়েছে যে, এই তহবিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ১ কোটি টাকা এবং ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যেমন জামানত বা ব্যক্তিগত গ্যারান্টি, যা অনেক প্রতিষ্ঠানকে তহবিল থেকে ঋণ নিতে বাধা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, স্টার্টআপ খাতের জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা চলছে এবং অভিজ্ঞ ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের নিয়ে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের মতে, ঋণ এবং ইকুইটি—দুই পদ্ধতিই থাকতে হবে, কারণ অনেক প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ ইকুইটি নিতে আগ্রহী নয় এবং ইকুইটি প্রক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ।