
সীমান্ত হত্যা ও বেড়া দেওয়ার বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফের যৌথ সমাধান
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে হত্যা ও বেড়া দেওয়ার বিষয়ে যেকোনো প্রশ্ন উঠলে তা দ্রুত যৌথ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত তিন দিনের বৈঠকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠকে সীমান্ত হত্যা ও বেড়া দেওয়ার বিষয় দুটিই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
বৈঠকের শেষ দিনে আজ বৃহস্পতিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ মিটার এলাকা ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ হিসেবে স্বীকৃত, যেখানে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা যায় না। তবে ১৫০ মিটারের বাইরে যে কোনো স্থাপনায় আপত্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, কিছু ক্ষেত্রে সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, যা দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে সমাধান করা হবে। বিজিবি ও বিএসএফ উভয়েই এই বিষয়ে একমত হয়েছে।
সীমান্ত সমস্যা সমাধানে যৌথ পরিদর্শন করবে বিজিবি-বিএসএফ
সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি উঠলে বা সমস্যা দেখা দিলে, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ যৌথভাবে এলাকা পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেবে। আজ বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শেষ দিনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি পুনর্বিবেচনা নিয়ে এই বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি, কারণ এটি আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বৈঠকের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দুই দেশের সীমান্তে যেকোনো সমস্যা সমাধানে বিজিবি ও বিএসএফ সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, বিজিবির মহাপরিচালক এসব অভিযোগকে ‘অতিরঞ্জিত ও মিডিয়ার সৃষ্টি’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিজিবির আওতাধীন সীমান্ত এলাকার ৮ কিলোমিটারের মধ্যে দুর্গাপূজার সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ধর্মীয় নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিজিবি সতর্ক রয়েছে এবং তাঁদের সুরক্ষায় কাজ করছে।

ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ বৈঠকে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী ও বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী নিজেদের মধ্যে দলিল বিনিময় করেন। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে বিএসএফের সদর দপ্তরেছবি: সংগৃহীত
৫ আগস্টের পর ভারত-বাংলাদেশের পুরো সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে উল্লেখ করেন বিজিবির মহাপরিচালক। বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীও সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৫ আগস্টের পর ভারতে অনুপ্রবেশের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। অনুপ্রবেশ রুখতে বিএসএফ অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতন জানিয়ে তিনি বলেন, দুই বাহিনীর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগও খুবই ঘনিষ্ঠ। নিজেদের মধ্যে তাদের প্রায়ই বৈঠক হয়। এই সহযোগিতার জন্য দুই বাহিনীই প্রশংসার যোগ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়টি বিজিবির পক্ষ থেকে এই বৈঠকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে বিজিবিকে বারবার বলা হয়। কিন্তু তবু দীর্ঘ সীমান্তের কোথাও কোথাও দুষ্কৃতকারীরা সক্রিয় থাকে। বিএসএফ সতর্কভাবে তাদের মোকাবিলা করে। প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করার নীতি থেকে বিএসএফ সরেনি বলে উল্লেখ করেন দলজিৎ সিং চৌধুরী।
এ বিষয়ে বিএসএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সীমান্তে অপরাধ ও হিংসার মোকাবিলায় দুই বাহিনীই যৌথভাবে সক্রিয়। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া ও তথ্যের দ্রুত আদান-প্রদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো পক্ষে প্রাণহানি না ঘটিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়।